গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োগ ও কর্মক্ষেত্রসমূহ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ডিজিটাল টেকনোলজি ইন বিজনেস-২ - গ্রাফিক্স ডিজাইন Graphics Design | | NCTB BOOK

আমাদের চারপাশে অনেক কিছুই আমাদের নজর কাড়ে, মনে প্রশান্তি আনে। কলমের খোঁচায় যেমন- লেখনী ফুটে উঠে, তেমনি তুলির ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে রঙের খেলা বা মন ভোলানো ডিজাইন। যুগের পরিবর্তনের কারণে সবকিছুই এখন আধুনিক হয়েছে, সেই সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ডিজাইনারের চাহিদাও বেড়েছে দিন দিন এবং সেই সাথে বেড়েছে এর প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ।

■ গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োগক্ষেত্র

গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োগক্ষেত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা—

১. প্রিন্ট ডিজাইন

২. ডিজিটাল মাধ্যম।

১. প্রিন্ট ডিজাইন : প্রিন্ট ডিজাইন অনেক ধরনের হতে পারে। যেমন- কাগজে প্রিন্ট করা যে কোনো ধরনের ডিজাইন, লোগো, কর্পোরেট আইডেন্টিটি, ফ্লায়ার, ফুড মেনু, পোস্টকার্ড, রেক কার্ড, পোস্টার, ম্যাগাজিন, বিজ্ঞাপন এর পাশাপাশি ডিজিটাল সাইনবোর্ড, টি-শার্ট এর প্রিন্ট ডিজাইন, যেকোনো ধরনের ফেব্রিক এর ডিজাইন, আর্ট এন্ড ইলাস্ট্রেশন, প্যাটার্ন ডিজাইন প্রোডাক্ট এন্ড প্যাকেজিং ডিজাইন, লেভেল ডিজাইন ইত্যাদি।

২. ডিজিটাল মাধ্যম : ডিজিটাল মিডিয়াম এর মধ্যে সর্বপ্রথম বলা যায়, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন (স্বাভাবিক ভাবে ওয়েবসাইট এবং মোবাইল কিংবা কম্পিউটার এর সফটওয়্যার এর দৃশ্যমান ডিজাইনকে বোঝানো হয়), অনলাইন মাধ্যমে পাবলিশ করা বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বা আইডেন্টিটি ডিজাইন, যেমন— ফেসবুক বা লিংকড ইন এর মতো বিজনেস পেজের প্রোফাইল কভার, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি মাধ্যমে দেওয়া পোস্ট বা বিজ্ঞাপনী গ্রাফিক্স, ডিজিটাল বিলবোর্ড, ই-বুক, ম্যাগাজিন ইত্যাদি। ডিজিটাল মিডিয়ামকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা-

ওয়েব: ওয়েব ব্যানার, ইন্টারফেস ডিজাইন ইত্যাদি। 

ইলেকট্রনিক মাধ্যম : নাটক, টিভি বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি।

■ গ্রাফিক্স ডিজাইনের কর্মক্ষেত্রসমূহ

সৃজনশীল পেশা : গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি সৃজনশীল পেশা। শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দিয়ে ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়া যায় না, ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার জন্য ব্যবহারিক জ্ঞান আবশ্যক। গ্রাফিক্স ডিজাইনে মুখস্থ বিদ্যা কিংবা কপি-পেস্টের সুযোগ নেই বরং এখানে নিজের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করতে হবে। নিজের মধ্যে যদি আঁকা-আঁকির মতো সৃজনশীলতা থাকে তবে নিয়মিত ডিজাইন চর্চা করা এবং অন্যের ডিজাইন দেখার মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং : গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সবচাইতে বড় সুবিধা হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং করা যায়। যেহেতু বর্তমান সময়ে সবকিছু কম্পিউটার এবং প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে, তাই মানুষকে আকর্ষণ করতে গ্রাফিক্সের প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাহিদা অনেক বেশি, যার ফলে আয়ের পরিমাণও বেশি। গ্রাফিক্সের চাহিদা এতটাই বেশি যে, শুধু গ্রাফিক্সের কাজের জন্য বেশ কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে।

ডিজাইন বিক্রি: বর্তমান সময়ে অনলাইনে ডিজাইন বিক্রি করার বেশ কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে। একজন প্রফেশনাল ডিজাইনার তার নিজের ডিজাইন অনলাইনে বিক্রি করার সুযোগ পাবে। ফলে একবার ডিজাইন তৈরি করলে আজীবন সেই ডিজাইন থেকে অর্থ আয় করা সম্ভব।

চাকুরি করার সুযোগ : গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্যে স্বাধীনভাবে কাজ করার পাশাপাশি চাকুরি করার সুযোগ রয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাকুরির সুযোগ-সুবিধা এবং বেতনের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। আমেরিকার Fastsigns Inc কোম্পানি তাদের গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের ৪৫ হাজার ডলার বেতন দিয়ে থাকে। এছাড়া বোনাস ও অন্যান্য সুবিধা তো আছেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়, এখানে নতুন ডিজাইনার হিসেবে যোগ দিলেও ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করার সুযোগ রয়েছে। আর প্রফেশনাল হলে ১ লক্ষ টাকার উপরে বেতন পাওয়া সম্ভব ।

কাজেরক্ষেত্র : চাকুরি এবং ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর কোচিং, ইনস্টিটিউট কিংবা আইটি ফার্ম দেওয়া যায়। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে দূরবর্তী জব করার সুবিধা রয়েছে। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ কোম্পানি তাদের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্যে পার্টটাইম বা ফুল-টাইম গ্রাফিক্স ডিজাইনার রাখছে। এসব রিমোট জব ঘরে বসে করার সুযোগ আছে। চাকুরি করে গ্রাফিক্স ডিজাইনার যতটা না আয় করা যায়, তার থেকে বেশি আয় করা সম্ভব ডিজাইন বিক্রি এবং ফ্রিল্যান্সিং করে।

নিজের প্রতিভা প্রকাশ : সৃজনশীল পেশা হওয়ার সুবাদে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে নিজের প্রতিভা বিকশিত এবং প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া যায়। গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো রং, আকৃতি, বৈশিষ্ট্য নিয়ে খেলা। আর এই খেলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় কাঙ্ক্ষিত ডিজাইন। যখন অনেক ভালো ডিজাইন করা যায়, তখন মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় এবং নিজের একটি পরিচয়ও তৈরি করা যায়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : অনেক পেশা রয়েছে যার জন্য উচ্চ শিক্ষা, ডিগ্রি এবং সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। কিন্তু গ্রাফিক্স ডিজাইনের ক্ষেত্রে এসবের কোনো প্রয়োজন হয় না। গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য প্রয়োজন শুধু টেকনিক্যাল এবং কমিউনিকেশনের দক্ষতা। গুগল, অ্যাপলের মতো বড় বড় কোম্পানি তাদের গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজের জন্য অনেক নতুন নতুন লোক নিয়োগ দেয় যাদের অনেকের উচ্চ শিক্ষা নেই।

প্রতিদিন নতুন কিছু শিখা : গ্রাফিক্স ডিজাইন এমন একটি বিষয় / পেশা যেখানে প্রতিনিয়ত শেখা যায়। নিজের কাজের, অন্যের কাজের থেকে নিত্যনতুন আইডিয়া পাওয়া যাবে। এই সেক্টরের প্রতিটি কাজই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন আর নতুনত্বে ভরপুর। যা আমাদেরকে সৃজনশীলভাবে দক্ষ হতে সাহায্য করবে।

নিয়মিত ডিজাইনের চাহিদা : অটোমেশন এর যুগে যখন আমাদের কাজগুলো সব অটোমেটিক রোবটের হাতে চলে যাচ্ছে, সেই সময়ে নিশ্চিত বলা যায় যে ডিজাইনের জন্য এখনও ক্রিয়েটিভিটি এবং হিউম্যান থিঙ্কিং এর প্রয়োজন। কারণ রোবট শুধুমাত্র কমান্ড এবং ফিক্সড ডেটার উপর নির্ভর করে কাজ করে। কিন্তু নতুন চিন্তা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এর জন্য এখনও মানুষকেই চিন্তা ভাবনা করতে হয় এবং সেটা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।

কর্মক্ষেত্র তৈরি করে : ডিজাইনার হিসেবে শুধুমাত্র স্টুডিওতে নয়, ডিজাইনারের মূল্যায়ন সব জায়গায় হয় । গ্রাফিক্স ডিজাইন এমন কিছু যা ছাড়া কোনো ব্যবসা চালানো সম্ভব না। যে কোনো ব্যবসার প্রচার প্রচারনা, উপস্থাপন, সাজানোর জন্যও গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজন। যদি একটি প্রতিষ্ঠানের উপর সন্তুষ্ট না হন, তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অন্যপ্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করা যেতে পারে, এমনকি ইন্টারন্যাশনাল টিমে যোগ দিতে পারা যায়।

শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ : গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার পর শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে বেছে নেয়া যায়। নতুন নতুন মানুষকে গ্রাফিক্সের কাজ শেখানো যায়। এছাড়া শেখানোর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ হবে। বর্তমানে অনলাইনে বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে ক্লাস নেয়া যায় কিংবা ভিডিও ক্লাস করে আপলোড করে আয় করা যায়। অফলাইনে ক্লাস করিয়েও আয় করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমান সময়ে গ্রাফিক্স শেখার জন্য অনেকেই আগ্রহী আছে।

মার্কেটিং ও ব্রান্ডিং : বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক মার্কেটে নিজের ব্যবসাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলে ধরতে নিজ পণ্যের মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং এর কোন বিকল্প নেই। আর এই মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং করার জন্য প্রয়োজন হবে গ্রাফিক্স ডিজাইন দক্ষতার। সৃজনশীলতা যে কোনো বিজনেসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সৃজনশীল কাজগুলোর একটি অংশ গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে শুধু ক্লায়েন্ট এর কাজই নয়, নিজের ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্রান্ডিং এবং মার্কেটিং এর কাজে সৃজনশীল দক্ষতাকে ব্যবহার করা।

ঘরে বসে আয়ের সুযোগ : বর্তমানে বেকারত্ব যে ভাবে বাড়ছে তাতে চাকরি এখন “সোনার হরিণ” । তাই বেকারত্বের গ্লানিকে দূরে রাখতে তরুণরা এখন ঝুঁকে পড়ছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রতিদিন হাজার লোক শুধুমাত্র ডিজাইনের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তাছাড়া এটি এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজেও ভালোভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে ফ্রিল্যান্সিংয়েও নিজের ক্যারিয়ার পাকাপোক্তভাবে গড়ে তুলতে পারি এবং ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে হতে পারি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।

👤 নিজে করো : আমরা জেনেছি যে, গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ডিজাইনারের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন এবং সেই সাথে বাড়ছে এর প্রয়োগক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রসমূহ। নিম্নে ডিজাইনের প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন ছকের মাধ্যমে দেওয়া করা হলো। যেটি সঠিক হবে তারপাশে টিক দাও। একটি করে দেখানো হলো।

প্রশ্নটিক চিহ্ন
গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োগক্ষেত্রর অংশ কয়টি? 🔲 ২ ✅,৩ 🔲
সৃজনশীল পেশা, প্রিন্ট ডিজাইন, ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং, মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং, ডিজাইন বিক্রি, ডিজিটাল মিডিয়াম ইত্যাদি এর মধ্যে ডিজাইনের কর্মক্ষেত্রসমূহঅংশ কয়টি? ২🔲,৪🔲,৬🔲
গ্রাফিক্স, ডিজিটাল বিলবোর্ড, ই-বুক, ম্যাগাজিন, ফ্লায়ার, ফুড মেনু, পোস্টকার্ড, রেক কার্ড, পোষ্টার, ম্যাগাজিনইত্যাদি ডিভাইস গুলো মধ্যে প্রিন্ট ডিজাইন কয়টি?৪🔲,৫🔲,৬🔲
Content added || updated By
Promotion